18 January, 2020

শিশুর মানসিক প্রতিপালন বিধি

সংগৃহীত-
শিশুর প্রতি পর্যাপ্ত ভালোবাসা, মনোযোগ, তার খেলার সুযোগ এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া হলে তার মানসিক বিকাশ হবে। প্রত্যেক শিশুর ভিতর অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকে। তাকে প্রস্ফুটিত করতে হলে নিম্নরূপ পদক্ষেপ গুলি একান্তই প্রয়োজন।
১।    শিশুর জন্মের পূর্ব থেকে কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন। পিতামাতাকে উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করতে হবে একজন শিশুকে  পৃথিবীতে জন্মলাভের জন্য। মায়ের গর্ভে শিশুর শারীরিক আকারসহ মানসিক গঠন ৮০% সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই মায়ের প্রতি সঠিক সুন্দর প্রস্তুতি এবং দায়িত্বের মাধ্যমে একজন শিশুর জন্মলাভের প্রয়োজন।
২। জন্মের পর থেকে শিশু শিখতে আরম্ভ করে। ২ বছর বয়স হলে শিশুর মানসিক গঠন সম্পন্ন হয়। তার মানসিক বিকাশে অপরিহার্য প্রয়োজন তার প্রতি মনোযোগ ও ভালোবাসা প্রদান। তার জিজ্ঞাসাগুলো এড়িয়ে না গিয়ে সঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। এক্ষনে জানা না থাকলে সময় নিন এবং পরে সঠিক উত্তরটি তাকে জানান।
৩। খেলাধুলা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ সহায়ক। তাই শিশুকে খেলার সুযোগ দিন। খেলার সামগ্রী সরবরাহ করুন এবং খেলতে সাহায্য করুন। প্রয়োজনে নিজেও তার সঙ্গে খেলুন।
৪। সব সময় চোখ কান খোলা রাখুন। যা দেখেছেন, যা শুনেছেন, তা নিজের বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করুন। সহানুভুতির সাথে সবকিছু বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করলে শিশু সুষ্ঠু ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে বেড়ে উঠবে।
৫। শিশুকে ছবির বই, খেলনা দিয়ে এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে ভালোবেসে শেখার সুযোগ দিন। মস্তিষ্কের গ্রেম্যাটার (বুদ্ধি/স্মৃতি অঞ্চল) এর এ্যাসোসিয়ান ফাইবারের বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়বে। এগুলো আরও সক্রিয় হবে।
৬। সব সময় এটা করো, ওটা করো করলে শিশুর ব্যক্তিত্ব সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না। মানসিক বিকৃতি দেখা দিতে পারে। বোকাটে হয়ে যায়। বরং ওর ইচ্ছাগুলোর মধ্যে দিয়ে আপনার অভিষ্ট লক্ষ্যটি অর্জন করতে পারলে আরও ভালো হয়। ধৈর্য অনুভব ও সহানুভুতি দিয়ে শিশুর আবেগ বা প্রবণতাকে গ্রহণ করলে শিশু সুন্দর আচরণের অধিকারী হবে এবং সুষ্ঠু ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে গড়ে উঠবে।
৭। শিশুর যে বিষয়টির উপর সবচেয় বেশি আগ্রহ সেটিকেই প্রাধান্য দিন। তার মধ্য দিয়ে সে অনেক বড় হতে পারবে। তাকে জানতে চেষ্টা করুন। শিশুর বয়স, সামর্থ্য, মেধা, রুচির পাশাপশি ভাবুন তার  ১) আগ্রহ বা প্রবণতা ২) শেখার ক্ষমতা এবং ৩) বিচার বুদ্ধি বা বিশ্লেষণ ক্ষমতা।
৮। মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় ব্যায়াম হলো চোখ, কান খোলা রাখা। এতে মস্তিষ্কের কোষগুলো উত্তেজিত হয় এবং তার ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শিশুকে টিভি দেখতে দেওয়া, গান শোনা, খেলা-ধুলা করতে এবং দেখতে দেওয়া নিজে থেকে কোন কিছু কিনে তার দাম দেওয়া এবং তার হিসাব বুঝে নেওয়া ইত্যাদি কাজের সুযোগ দিন। তাতে মস্তিষ্কের বিকাশ হবে। তবে অবস্থার সাথে আবার নিয়ন্ত্রণ ও করুন।
৯। শিশু সবসময় সমর্থন ও উৎসাহ পেতে চায়। সে যা পারে তা দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করুন, উৎসাহ দিন। পাশাপাশি বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটু কঠিন দিয়ে চেষ্টা করুন। একেবারে অনেকটা চাপ সৃষ্টি করবেন না। শারীরিক ও মানসিক শাস্তি শিশুর বৃদ্ধির পথে একটি বড় অন্তরায়। এটি পরিহার করুন। নিজের কোন ক্ষোভ বা ঝাল কখনও শিশুর উপর ফেলবেন না। তার প্রয়োজনগুলো সম্ভব হলে আজই পূরণ করুন। আবেগিক বঞ্চনা শিশুর শরীর এবং মানসিক গঠনে ভীষণ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
১০। আপনার শিশুকে একজন সত্যিকার মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে আপনার অবদানই সবচেয়ে বেশি। আপনি সবচেয় বড় পর্যবেক্ষক হউন। তার সুবিধা অসুবিধাগুলো বুঝবার চেষ্টা করুন। প্রকৃত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন যা তার অগ্রগতিকে ব্যহত করছে। এ ব্যাপারে শিক্ষক এবং  চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
    সবশেষে মনে রাখা প্রয়োজন, আপনার শিশুটির মধ্যে যে অফুরন্ত সম্ভাবনা ছিল তার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটির জন্য যেন আপনি দায়ী না হন। শিক্ষকগণ অল্প সময়ের জন্য আপনার শিশুটির দায়িত্ব নিলেও তাঁহারা অনেক জ্ঞানী-তাদেরকে মূল্যায়ন করুন। ধর্মীয় অনুশাসন এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বোধ এবং সুষ্ঠু আচরণের অধিকারী সর্বাগ্রে আপনাকেই হতে হবে। তা না হলে সবকিছু প- হয়ে যাবে। কেননা শিশু তার নিকটতম জনের আচরণ অনুসরণ করেই জীবনের মূল শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তোলে।

No comments: