বাংলা রচনাঃ বেগম রোকেয়া
(সংকেত: ভূমিকা; জন্ম
ও শৈশব জীবন; শিক্ষাজীবন; জীবনে
অনুপ্রেরণার উৎস; বিবাহিত জীবন; বাংলা
ভাষা চর্চায় প্রতিবন্ধকতা; ইংরেজি ভাষার চর্চা; সাহিত্যকর্ম; সাহিত্য ও নারীমুক্তি; সমাজ সংগঠক; অন্তিমযাত্রা; উপসংহার।)
ভূমিকাঃ
বাঙালি মুসলিম সমাজের নারীদের অন্ধকারময় পৃথিবীতে আলোকবার্তা হাতে এসেছিলেন বেগম
রোকেয়া। তার সকল কর্মের মূলে ছিল নারীমুক্তির স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে
গিয়েই তিনি একদিকে কলম তুলে নিয়েছিলেন, অন্যদিকে নারীদের নতুন পথের সন্ধান দেখিয়েছিলেন। এ কারণেই তিনি আজও ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’ হিসেবে পরিচিত।
জন্ম ও শৈশবজীবনঃ বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। বেগম রোকেয়ার পারিবারিক নাম রোকেয়া খাতুন। তার পিতার নাম জহিরুদ্দিন মুহম্মদ আবু আলী সাবের এবং মাতার নাম রাহাতুন্নেসা। বেগম রোকেয়া যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তাঁদের জমিদারি অনেকটা পড়ন্ত দশায় ছিল। তবুও তার শৈশব কাটে তৎকালীন মুসলমান জমিদারি রীতি অনুযায়ী কঠোর পর্দা ও অবরোধের মধ্যে। তার নিজের ভাষায় “অবিবাহিত বালিকাদিগকে অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বাড়ির চাকরাণী ব্যতীত অপর কোনো স্ত্রীলোক দেখিতে পায় না।” এমন কঠোর পর্দা প্রথার মধ্যেই বেগম রোকেয়ার বেড়ে ওঠা।
শিক্ষাজীবনঃ বিশ্বের অনেক কৃতী ব্যক্তির মতো বেগম রোকেয়াও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। নিজের প্রবল আগ্রহ ও কিছু মানুষের সহায়তায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বশিক্ষিত। তাইতো সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল চালু করার সময় প্রথমদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। সামসুন্নাহার মাহমুদের ভাষায়- “রোকেয়া যখন প্রথম পাঁচটি ছাত্রী নিয়ে বালিকা স্কুল স্থাপন করেন, তখন তিনি ভেবে পাননি কী করে একজন শিক্ষয়িত্রী একই সঙ্গে পাঁচটি মেয়েকে পড়াতে পারে।” তবে তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি প্রভৃতি ভাষা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তার সাহিত্যে আমরা এর পরিচয় পাই।
জীবনে অনুপ্রেরণার উৎসঃ বেগম রোকেয়া যে মুসলিম সমাজে বেড়ে উঠেছিল সেখানে স্ত্রীশিক্ষা হিসেবে প্রচলিত ছিল ‘টিয়া পাখির মতো কোরান শরীফ’ পাঠ, নামাজ, রোজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান। এছাড়া স্বামী বা নিকট আত্মীয়কে চিঠি লিখতে পারা, দু-একটি উর্দু-ফারসি পুঁথি পুস্তক পড়ার ক্ষমতা, সেলাই, রান্না ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন মেয়েদের বাংলা শিক্ষা ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ। কিন্তু এমন সমাজের মধ্যেও বেগম রোকেয়ার বড় বোন করিমুন্নেসা একটু আধটু বাংলা পড়েছিলেন এবং ছদ্মনামে বেশ কয়েকটা কবিতাও লিখেছিলেন। করিমুন্নেসার বিদ্যানুরাগ বেগম রোকেয়াকে অনুপ্রেরণা যোগায়। এর সাথে বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের প্রচেষ্টায় তিনি শৈশব থেকে কুসংস্কারকে ঘৃণা করতে শেখেন এবং বিদ্যার্জন করেন। বিয়ের পর স্বামী সাখাওয়াত হোসেনও তাকে এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।
বিবাহিত জীবনঃ উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের সময় বেগম রোকেয়ার বয়স ছিল ১৬ এবং সাখাওয়াত হোসেনের ছিল ৩৮ বছর। সাখাওয়াত হোসেন প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাকে বিয়ে করেন। ব্যক্তি হিসেবে সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদারমনা, রুচিশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও কুসংস্কার বিরোধী মানুষ। এছাড়া স্ত্রীশিক্ষার পক্ষপাতীও ছিলেন তিনি। তাইতো তিনি বেগম রোকেয়াকে ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। এমনকি ১৯০৯ সালে মৃত্যুর আগেই মেয়েদের শিক্ষার জন্য দশ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া ছিলেন নিঃসন্তান। তার দু’টি কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তাদের অকাল মৃত্যু হয়।
বাংলা ভাষা চর্চায় প্রতিবন্ধকতাঃ উর্দুর প্রবল প্রতিকূল স্রোতে বাংলা ভাষাকে প্রাণপ্রণে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন বেগম রোকেয়া। তার স্বামী ও অভিভাবকরা সবাই ছিলেন বাংলা ভাষার বিরোধী। কিন্তু এর মাঝেও তিনি বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। এছাড়া স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে বাংলা শেখাবার ব্রতও নিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে তাকে যে নিদারুণ সংগ্রাম করতে হয়েছিল তার বর্ণনা ‘মতিচূর’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডের করিমুন্নেসার নামে উৎসর্গ পত্রে রয়েছে।
ইংরেজি ভাষার চর্চাঃ বেগম রোকেয়া বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ না করলেও ইংরেজি ভাষার ওপর তার যথেষ্ট দখল ছিল। তার লেখা ওলফভট্র, Sultana's Dream-এর প্রমাণ। এছাড়া বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছে দেয়া ইংরেজিতে লেখা চিঠিও এর প্রমাণ বহন করে।
জন্ম ও শৈশবজীবনঃ বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। বেগম রোকেয়ার পারিবারিক নাম রোকেয়া খাতুন। তার পিতার নাম জহিরুদ্দিন মুহম্মদ আবু আলী সাবের এবং মাতার নাম রাহাতুন্নেসা। বেগম রোকেয়া যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন তাঁদের জমিদারি অনেকটা পড়ন্ত দশায় ছিল। তবুও তার শৈশব কাটে তৎকালীন মুসলমান জমিদারি রীতি অনুযায়ী কঠোর পর্দা ও অবরোধের মধ্যে। তার নিজের ভাষায় “অবিবাহিত বালিকাদিগকে অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং বাড়ির চাকরাণী ব্যতীত অপর কোনো স্ত্রীলোক দেখিতে পায় না।” এমন কঠোর পর্দা প্রথার মধ্যেই বেগম রোকেয়ার বেড়ে ওঠা।
শিক্ষাজীবনঃ বিশ্বের অনেক কৃতী ব্যক্তির মতো বেগম রোকেয়াও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। নিজের প্রবল আগ্রহ ও কিছু মানুষের সহায়তায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বশিক্ষিত। তাইতো সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল চালু করার সময় প্রথমদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। সামসুন্নাহার মাহমুদের ভাষায়- “রোকেয়া যখন প্রথম পাঁচটি ছাত্রী নিয়ে বালিকা স্কুল স্থাপন করেন, তখন তিনি ভেবে পাননি কী করে একজন শিক্ষয়িত্রী একই সঙ্গে পাঁচটি মেয়েকে পড়াতে পারে।” তবে তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, ফার্সি প্রভৃতি ভাষা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তার সাহিত্যে আমরা এর পরিচয় পাই।
জীবনে অনুপ্রেরণার উৎসঃ বেগম রোকেয়া যে মুসলিম সমাজে বেড়ে উঠেছিল সেখানে স্ত্রীশিক্ষা হিসেবে প্রচলিত ছিল ‘টিয়া পাখির মতো কোরান শরীফ’ পাঠ, নামাজ, রোজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান। এছাড়া স্বামী বা নিকট আত্মীয়কে চিঠি লিখতে পারা, দু-একটি উর্দু-ফারসি পুঁথি পুস্তক পড়ার ক্ষমতা, সেলাই, রান্না ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন মেয়েদের বাংলা শিক্ষা ছিল অনেকটা নিষিদ্ধ। কিন্তু এমন সমাজের মধ্যেও বেগম রোকেয়ার বড় বোন করিমুন্নেসা একটু আধটু বাংলা পড়েছিলেন এবং ছদ্মনামে বেশ কয়েকটা কবিতাও লিখেছিলেন। করিমুন্নেসার বিদ্যানুরাগ বেগম রোকেয়াকে অনুপ্রেরণা যোগায়। এর সাথে বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের প্রচেষ্টায় তিনি শৈশব থেকে কুসংস্কারকে ঘৃণা করতে শেখেন এবং বিদ্যার্জন করেন। বিয়ের পর স্বামী সাখাওয়াত হোসেনও তাকে এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।
বিবাহিত জীবনঃ উর্দুভাষী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়। তাদের বিয়ের সময় বেগম রোকেয়ার বয়স ছিল ১৬ এবং সাখাওয়াত হোসেনের ছিল ৩৮ বছর। সাখাওয়াত হোসেন প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাকে বিয়ে করেন। ব্যক্তি হিসেবে সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন একজন উদারমনা, রুচিশীল, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও কুসংস্কার বিরোধী মানুষ। এছাড়া স্ত্রীশিক্ষার পক্ষপাতীও ছিলেন তিনি। তাইতো তিনি বেগম রোকেয়াকে ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। এমনকি ১৯০৯ সালে মৃত্যুর আগেই মেয়েদের শিক্ষার জন্য দশ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া ছিলেন নিঃসন্তান। তার দু’টি কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছিল। কিন্তু তাদের অকাল মৃত্যু হয়।
বাংলা ভাষা চর্চায় প্রতিবন্ধকতাঃ উর্দুর প্রবল প্রতিকূল স্রোতে বাংলা ভাষাকে প্রাণপ্রণে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন বেগম রোকেয়া। তার স্বামী ও অভিভাবকরা সবাই ছিলেন বাংলা ভাষার বিরোধী। কিন্তু এর মাঝেও তিনি বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। এছাড়া স্বামী সাখাওয়াত হোসেনকে বাংলা শেখাবার ব্রতও নিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে তাকে যে নিদারুণ সংগ্রাম করতে হয়েছিল তার বর্ণনা ‘মতিচূর’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডের করিমুন্নেসার নামে উৎসর্গ পত্রে রয়েছে।
ইংরেজি ভাষার চর্চাঃ বেগম রোকেয়া বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ না করলেও ইংরেজি ভাষার ওপর তার যথেষ্ট দখল ছিল। তার লেখা ওলফভট্র, Sultana's Dream-এর প্রমাণ। এছাড়া বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাছে দেয়া ইংরেজিতে লেখা চিঠিও এর প্রমাণ বহন করে।
সাহিত্য কর্মঃ আধুনিক জাগরণশীল বাঙালি মুসলিম সমাজে বেগম রোকেয়াই প্রথম উল্লেখযোগ্য
লেখিকা। সাহিত্য ক্ষেত্রে তিনি মিসেস আর এস হোসেন নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্রথম
প্রকাশিত রচনা পিপাসা। ১৯০১ সালে ‘নবপ্রভা’ পত্রিকায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
এছাড়া তাঁর বিভিন্ন লেখা নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হত। তার গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচটি।
এগুলো হলো- মতিচূর (প্রথম খন্ড), সুলতানার স্বপ্ন,
মতিচূর (দ্বিতীয় খন্ড), পদ্মরাগ ও অবরোধবাসিনী।
এছাড়া সম্প্রতিকালে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে আরও কিছু রচনা ও চিঠিপত্র পাওয়া গেছে।
সাহিত্য ও নারী মুক্তিঃ
সাহিত্য ও নারী মুক্তিঃ
“সুকঠিন গার্হস্থ্য ব্যাপার
সুশৃঙ্খলে কে পারে চালাতে
রাজ্যশাসনের রীতিনীতি
সূক্ষ্মভাবে রয়েছে ইহাতে।”
বেগম রোকেয়া এই কথাটি শুধু মুখেই বলেননি তা মনে প্রাণে বিশ্বাস
করতেন। তাইতো নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে নারীর মানবীয় সত্তার প্রতিষ্ঠা কামনা
করেছেন। মুসলিম নারী সমাজের কুসংস্কারের জাল ছিন্ন করতে এবং জড়তা দূর করতে তিনি
সাহিত্যকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি বলতেন- “না জাগিলে ভারত ললনা, এ ভারত আর জাগিবে না।”
তাই তিনি তার লেখার মাধ্যমে নারীর জাগরণের জন্য লড়াই করেছেন।
মুক্তিফল গল্পে তাই বলেছেন- “কন্যারা জাগ্রত না হওয়া
পর্যন্ত দেশমাতৃকার মুক্তি অসম্ভব।” বেগম রোকেয়ার মতে এই
জাগরণের প্রধান শর্ত শিক্ষা। তার ভাষায় “আমরা পুরুষের
ন্যায় সাম্যক সুবিধা না পাইয়া পশ্চাতে পড়িয়া আছি।” তিনি
বুঝেছিলেন শিক্ষাই হলো স্বনির্ভরতার সোপান। তাই শিক্ষাকে তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে
নিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য, আর্থিক সমস্যা, সামাজিক বাধা, লোকনিন্দা কোনো কিছুই তাকে এই
ব্রত থেকে সরাতে পারেনি। তাইতো স্ত্রী জাতির অবনতি, অর্ধাঙ্গী,
সুগৃহিনী, বোরকা, গৃহ, জাগো গো ভগিনী প্রভৃতি প্রবন্ধে তিনি এই
শিক্ষার জয়গানই গেয়েছেন, দিয়েছেন নারী মুক্তির দীক্ষা।
সমাজ সংগঠকঃ বেগম রোকেয়া কেবল লেখিকাই নন, নারী জাগরণের অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন। তিনি ১৯০৯ সালে ১ অক্টোবর ভাগলপুরে পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই তিনি একটি আন্দোলনের সৃষ্টি করেন। এই ধারাই শিক্ষার ধারাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে তিনি ১৯১৬ সালে “আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম” নামে একটি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই বিদ্যালয় ও নারী সমিতির কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন।
অন্তিম যাত্রাঃ বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর ৫২ বছর বয়সে আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগের রাতেও এগারোটা পর্যন্ত তিনি “নারীর অধিকার” নামক একটি প্রবন্ধ লেখার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কলকাতার কাছাকাছি চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত সোদপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার স্মরণে প্রথমে কলকাতার আলবার্ট হলে (বর্তমান কফি হাউজ) ও পরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে দুটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই শোকসভায় হিন্দু মুসলমান একই সাথে যোগদান করেছিলেন। সেখানে এক ভাষণে সৈয়দ এমদাদ আলী বলেছিলেন- “তাহার স্মৃতির উপরে আজ বাংলার মুসলমান সমাজ যে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতেছেন, বাংলার কোনো মুসলমান পুরুষের মৃত্যুতে সেরূপ করিয়াছেন বলিয়া জানি না।”
উপসংহারঃ বাঙালি মুসলিম সমাজে নারীমুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাব সত্যিই বিস্ময়কর। কারণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংগ্রাম করেছিলেন নারীমুক্তির লক্ষ্যে, নারীশিক্ষার লক্ষ্যে। বর্তমান নারী সমাজ যে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে তার অনেকটাই বেগম রোকেয়ার অবদান। এ জন্যই ২০০৪ সালের বিবিসি জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় তিনি ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন। তাই আবুল হুসেনের ভাষায় বলা যায়- “তাহার মতো চিন্তাশীল নারী প্রকৃতই নারীজাতি কেনো, সমগ্র মানবজাতির গৌরবের পাত্রী।”
সমাজ সংগঠকঃ বেগম রোকেয়া কেবল লেখিকাই নন, নারী জাগরণের অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন। তিনি ১৯০৯ সালে ১ অক্টোবর ভাগলপুরে পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই তিনি একটি আন্দোলনের সৃষ্টি করেন। এই ধারাই শিক্ষার ধারাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে তিনি ১৯১৬ সালে “আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম” নামে একটি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই বিদ্যালয় ও নারী সমিতির কাজে তিনি নিয়োজিত ছিলেন।
অন্তিম যাত্রাঃ বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর ৫২ বছর বয়সে আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগের রাতেও এগারোটা পর্যন্ত তিনি “নারীর অধিকার” নামক একটি প্রবন্ধ লেখার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কলকাতার কাছাকাছি চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত সোদপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার স্মরণে প্রথমে কলকাতার আলবার্ট হলে (বর্তমান কফি হাউজ) ও পরে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে দুটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই শোকসভায় হিন্দু মুসলমান একই সাথে যোগদান করেছিলেন। সেখানে এক ভাষণে সৈয়দ এমদাদ আলী বলেছিলেন- “তাহার স্মৃতির উপরে আজ বাংলার মুসলমান সমাজ যে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতেছেন, বাংলার কোনো মুসলমান পুরুষের মৃত্যুতে সেরূপ করিয়াছেন বলিয়া জানি না।”
উপসংহারঃ বাঙালি মুসলিম সমাজে নারীমুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাব সত্যিই বিস্ময়কর। কারণ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংগ্রাম করেছিলেন নারীমুক্তির লক্ষ্যে, নারীশিক্ষার লক্ষ্যে। বর্তমান নারী সমাজ যে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে তার অনেকটাই বেগম রোকেয়ার অবদান। এ জন্যই ২০০৪ সালের বিবিসি জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় তিনি ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন। তাই আবুল হুসেনের ভাষায় বলা যায়- “তাহার মতো চিন্তাশীল নারী প্রকৃতই নারীজাতি কেনো, সমগ্র মানবজাতির গৌরবের পাত্রী।”